সম্প্রতি স্থবির বিশ্ব রাজনীতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য। আন্দোলনের প্রধান কারণ আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে।

বর্ণবাদ ব্যাপারটি নতুন নয় পৃথিবীতে, সৃষ্টির আদিকাল থেকেই বর্ণবাদ কিংবা বৈষম্য ব্যাপারটি হয়ে আসছে,এমনকি বর্তমান সভ্যতায় ও । দাসপ্রথা তো বর্ণবাদের নিকৃষ্টতম উদাহরণ। বর্ণবাদের সাথে আমরা পরিচিত ছোট থেকেই,খেলার মাঠে একটু গায়ের রঙ কালো হলে কটু কথা শুনতে হয় বড় বড় খেলোয়াড়দের যতই ভাল খেলোয়াড় হোক না কেন।
বর্ণবাদ কিংবা বৈষম্য অনেক গুলো প্রভাবকের উপর নির্ভর করে। প্রধানত বর্ণবাদ গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে হয় ভাষা কিংবা আঞ্চলিকতা কিংবা ধর্ম এগুলো বর্তমান পৃথিবীব্যাপী বর্ণবাদের আগ্রাসী বিস্তারের প্রধান উপাদান । বর্ণবাদ মূলত অন্যের মতবাদ বিশ্বাস,সংস্কৃতি,সহজাত প্রবৃত্তি কে দাবিয়ে রেখে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মতবাদ বিশ্বাস,সংস্কৃতি,সহজাত প্রবৃত্তি চাপিয়ে দেয়া, যেটা আমি বর্তমান বিশ্বে খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আদিকালে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ছিল অশিক্ষিত,বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত। কিন্তু বর্ণবাদ নামক অপঘাতটি এখনো পৃথিবীর বুকে সদর্পে বিদ্যমান। পৃথিবীর বাসিন্দারা দিন দিন যত শিক্ষিত হচ্ছে বর্ণ বৈষম্যের হার যেন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।মূলত বর্তমানে বর্ণবৈষম্য খুব ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে বিশ্ব জুড়ে ,একে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য,সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, আর্থিক কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বর্ণবাদ কিংবা বর্ণ বৈষম্য অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। বর্ণবাদ বর্তমান পৃথিবীতে ঠুনকো কোন বিষয় নয় বৈশ্বিক শান্তির জন্য অন্যতম হুমকি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবাদের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে ইতিমধ্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবাদের করুন উপাখ্যানের দিকে আলোকপাত করলে আমরা দেখতে পাই বর্ণবাদ নামক বৈষম্যের কারণে মানবতা হুমকির সম্মুখীন।বর্ণবৈষম্য কিংবা সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত করছে মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে।
আসুন দেখে নেই যেসব দেশে বর্ণবৈষম্য কিংবা সাম্প্রদায়িকতার করাল গ্রাসে ভস্মীভূত হওয়ার অপেক্ষায় মানবতা যেসকল দেশের পরিস্থিতি –
ভারত:
পৃথিবীতে বর্ণবাদের সবচাইতে নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ রূপ দেখা যায় ভারতে। ভারতে প্রতিনিয়ত মানুষ সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়
ধর্ম,জাতের ভিন্নতার কারণে ।
ভারতে ধর্ম কিংবা মতাদর্শের কারণে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয় মানুষ। বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশি বৈষম্যের শিকার হয় সেখানে। কাশ্মীরে দমন পীড়নের ইতিহাস তো অর্ধ শতাব্দীর বেশি। গত ৫০ বছরে পাঁচ লক্ষের অধিক কাশ্মীরি
জনগণকে হত্যা করা হয়েছে ,সে সাথে লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দমন পীড়নের ঘটনা তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস তো আরো ভয়াবহ । ২০০২ সালের গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় চার হাজারের বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠী হত্যার শিকার হয় ,হাজার হাজার ঘর বাড়ি ,ধর্মীয় স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়,লাখ লাখ মুসলিম গুজরাট থেকে অন্য অঞ্চলে অভিবাসিত হতে হয় জীবন রক্ষার জন্য।

২০২০ এর শুরুতে এনআরসি বিলকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়।দিল্লির জাফরাবাদ এক দাঙ্গা এবং সহিংসতার ঘটনা শুরু হয়, যার ফলে ৪৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জন আহত হন।দিল্লির অনেক মুসলিম বাসিন্দা দিল্লি ছেড়ে পালন আত্মরক্ষার্থে।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শিখ ধর্মের অনুসারীরা ও প্রচুর অত্যাচারের শিকার হন ভারতের হিন্দু উগ্র মতাবলম্বীদের দ্বারা। এছাড়া ভারতে প্রতিনিয়ত উগ্র হিন্দু মতাবলম্বীদের দ্বারা জাত প্রথা নিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছে কথিত নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা। ভারতে অসহিষ্ণুতা , ধর্ম বৈষম্য কিংবা বর্ণবৈষম্য এতই বেশি অন্য ধর্মালম্বী কিংবা নিজ ধর্মের অনুসারী কেউ দমন পীড়নের হাত থেকে রক্ষা পায়না। ভারতের শতকরা ৬৪ ভাগ জনগোষ্ঠী নিজ দেশে বৈষম্যের শিকার হয়। যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্র
বর্ণবৈষম্যের সর্বনিকৃষ্ট নজির দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচাইতে সম্পদশালী কিংবা প্রভাবশালী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু এখানেই মানুষ বর্ণবাদের রেষানলের শিকার হয় বেশি। শত শত বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পীড়ন নিপীড়নের ইতিহাস তো সবার জানা। যুক্তরাষ্ট্রে গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে চাকুরী ,স্যালারি কিংবা সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও। ১৯৬৪ সালের আগ পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের বলতে গেলে কোন সামাজিক অধিকার ছিলোনা,শেতাঙ্গদের প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলাদা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ,তাও সংখ্যায় নগণ্য।
এমনকি ভোটাধিকারের অধিকার ও ছিল খুব সীমিত,মার্টিন লুথার কিং কৃষাঙ্গ মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন,এরপর থেকে পরিস্থিতির উত্তোরত্তর উন্নতি ঘটতে থাকে। কিন্তু বর্ণবাদের কালো ছায়া যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ভয়াবহ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী হয়রানির শিকার হয় বেশি শেতাঙ্গদের চাইতে প্রায় সাত গুন বেশি,এমনকি পুলিশ অফিসাররা কৃষাঙ্গ মানুষের সম্মান দিয়ে কথা বলতে পর্যন্ত চায় না। সম্প্রতি জর্জ ফ্লয়েড কে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারের আগেই যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বর্বর যুগের দাসপ্রথার চাইতেও নিকৃষ্ট।

ঘাড়ের উপর নয় মিনিট ধরে হাঁটু গেড়ে চেপে বসে ছিলো পুলিশ অফিসার, বারবার অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও পুলিশ অফিসার ছাড়েনি জর্জ ফ্লয়েডকে।
” I can’t breathe”
বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিল নয় মিনিট ধরে। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অমানবিক নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে থাকে সেখানে, যার অধিকাংশই অগোচরে থেকে যায়।বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন বর্ণ বৈষম্যের প্রতিবাদ করার সময় মিসৌরিতে মাইকেল ব্রাউন নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেকে আটবার গুলি করে হত্যা করা হয়।কৃষ্ণাঙ্গরা অমেরিকায় শিক্ষালয়ে,আদালতে কর্মক্ষেত্রে,এমনকি সিনেমায় ,সামাজিক মর্যাদায়
প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যেটা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা প্রশাসন ।
শ্বেতাঙ্গের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী চরম অবমূল্যায়নের শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অবমূল্যায়নের চিত্র প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে-
• নিউইয়র্ক শহরে, ২০১৮ সালে সালে পুলিশের চোখে মোট অপরাধীর শতকরা ৮৮% কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিন ছিল, এবং কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের ১০% অভিযুক্ত ছিল। (যদিও অভিযুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিন জনগোষ্ঠীর ৭০% সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিল)
• ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ রোগীরা প্রায় ৩৪% হিস্পানিক রোগী, ৪০% কৃষ্ণাঙ্গ রোগী এবং ৪০% স্থানীয় আমেরিকান রোগীদের তুলনায় উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন।
যদিও বর্তমানে বৈষম্য কমার কোন লক্ষন নেই যতদিন ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আছে, কারণ কৃষাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৮ শতাংশ গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে ট্রাম্প কে,বাকিরা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছিল। আমেরিকায় নির্বাচনে জেতার জন্য কৃষাঙ্গরা যুগে যুগে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে নির্বাচনে জেতার জন্যে ডেমোক্র্যাট কিংবা রিপাবলিকানদের কাছে, প্রকৃত অবস্থার পরিবর্তন হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর বাদে অন্য জাতি কিংবা বর্ণের প্রতি দশজনের ৫ জন কোন না কোনভাবে সাম্প্রদায়িক বা বর্ণ বৈষম্যের শিকার হন। প্রকৃত চিত্র মিডিয়ায় আসেনা সরাচর যা আরো ভয়াবহ
দক্ষিণ আফ্রিকা
বর্ণবাদের নিষ্ঠুর কালো থাবা আরো ভয়ানক দক্ষিণ আফ্রিকার ।সেখানে কয়েক শতক ধরে অভিবাসী শেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। নেলসন ম্যান্ডেলা সারা জীবন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও সেখানে বর্ণবাদ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়নি এখনো।

শ্বেতাঙ্গরা মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৮ শতাংশ হলে বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ,মূল্যবান প্রকৃতিক সম্পদের খনি কিংবা কল কারখানার প্রায় ৯৫% শতাংশ শেতাঙ্গদের দখলে।এমনকি খেলাখুলায় ও শোষণের শিকার হয় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী।দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ক্রীড়া সংস্থাগুলোর ৪৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এবং বাকি ৫৫ শতাংশ খেলোয়াড় কৃষ্ণাঙ্গ অথবা অন্য বর্ণ থেকে নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ দের জীবন্ত পুঁতে ফেলা,কিংবা অবর্ণনীয় নির্যাতনে খুন কিংবা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অশ্রাব্য গালি দিয়ে উত্তক্ত্য করা সহ অসংখ্য ঘটনা দেখা যায় যা নিত্যনমিত্তিক। প্রতিবছর হাজার হাজার ব্যাক্তি হতাহত হয় বর্ণবাদ নামক বিষবাষ্পের রেষারেষিতে।
মৌলিক চাহিদা পূরণে দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে হিমশিম খেতে হয় , যেখানে শেতাঙ্গর ভোগ-বিলাসময় জীবনের পেছনে অঢেল অর্থ সম্পদ ব্যয়ে মত্ত। আর্থিক,সামাজিক , রাজনৈতিক প্রত্যেক ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দক্ষিণ আফ্রিকায় শতকরা ৬২ জন ব্যাক্তি বৈষম্যের শিকার হয় যা অত্যন্ত ভীতি জাগানিয়া।তবে আশার বাণী হচ্ছে দিন দিন আফ্রিকায় বর্ণবাবিরোধী জনমত বাড়ছে ,পরিস্থিতিতে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।
তুরস্ক
তুরস্কে বর্ণবাদের প্রকোপ খুবই বেশী। তুরস্কে বর্ণবাদ প্রধানত সাম্প্রদায়িক এবং জাতিগত। তুরস্ক প্রধানত সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। তুরস্কে অন্য মতাদর্শের মুসলিম জনগোষ্ঠী সুন্নি মুসলিম কর্তৃক অত্যাচারের শিকার যেমন হয় তেমনি কুর্দি,আর্মেনিয়,গ্রীক এবং
ইহুদি জাতি নির্মম তুরস্কের শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের হাত থেকেও রেহায় পায় না। সাম্প্রদায়িক হানাহানি তুরস্কে অনেক বেশি যা শাসকগোষ্ঠী আড়াল করে রাখে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ৩ লাখ আর্মেনীয় হত্যা কিংবা একবিংশ শতাব্দীতে প্রায় ৭০ হাজার কুর্দি হত্যা করেছে তুরস্কের সেনাবাহিনী ,এবং লক্ষ লক্ষ কুর্দি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করেছে তারা । সবমিলিয়ে মানবতার চরম লঙ্ঘন করে যাচ্ছে তুরস্কের শাসক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত।

তুরস্কে মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ২০ শতাংশ রাষ্ট্র কিংবা মুসলিমদের দ্বারা বৈষম্যের শিকার। ছোট থেকেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ছোট করে দেখার শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানকার শিশুদের। পাঠ্যবইয়ে গ্রীক,আরব ,আর্মেনীয় ,কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিপূর্ণ করে রেখেছে তুরস্কের শিক্ষা মন্ত্রনালয়।
কুর্দি,আর্মেনিয়,গ্রীক,ইহুদি জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে জীবনযাত্রার মান অনেক কম কিংবা সরকার থেকে প্রত্যাশিত সেবাও পাওয়া যায়না সময়মত ।সবমিলিয়ে তুরস্কে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী চরম শোষণের শিকার যা দিন দিন বেড়ে চলছে। ফলশ্রুতিতে তুরস্কে এখন বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী থেকে।
ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জনগনকে হত্যা , মিয়ানমারে শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন এবং জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ, চীনা শাসক গোষ্ঠীর উইঘুর দমন পীড়নের নির্মমতা বর্ণবাদ বা সাম্প্রদায়িক শোষণের আধুনিক বর্বর রূপ। রাজনৈতিক গড়াকল কিংবা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে সহসা কোন দেশ নির্মম অত্যাচারের ঘটনায় সাধারণত কোন প্রতিবাদ করেনা ,কিংবা করেলও লোকদেখানো দায়সারা গোছের বিবৃতি দিয়ে সটকে পড়ে।নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বা উন্নত বিশ্বে জনগণ তাদের অধিকার রক্ষায় বর্ণবাদ কিংবা বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে কিন্তু ফিলিস্তিন,কাশ্মীর,উইঘুর কিংবা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ করার অধিকারটুকু ও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এসকল জনগোষ্ঠী বিশ্ব রাজনীতির নির্মম বলি।
আদিকাল থেকেই বর্ণবৈষম্য কিংবা সাম্প্রদায়িকতা পৃথিবীর সব অঞ্চলে কিংবা দেশে কম বেশি দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বে দল মত নির্বিশেষে যেভাবে সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দ্বারা দমন পীড়নের শিকার হচ্ছেন তা অকল্পনীয়।অচিরে এই অবস্থার উন্নতি ঘটবে সে আশা অনেক দূরের বাতিঘর । বর্ণবৈষম্য কিংবা সাম্প্রদায়িকতা বর্তমানে মরণব্যাধি এইডস, ক্যান্সার কিংবা পৃথিবী স্থবির করে দেয়া করোনা ভাইরাসের চেয়ে অধিকতর ভয়ংকর।