কেমন ছিল ৭ নভেম্বর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ?
অবৈধ স্বৈরাচারী শাসক জিয়া ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে হিটলারের হলোকাস্টের অনুরূপ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নিধন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুসারে জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রায় ৪১৮৬ জন সামরিক বাহিনীর সদস্যকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয় ,এই ৪১৮৬ জনের প্রায় সবাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা।খালেদ মোশাররফকে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে হত্যা করে জিয়ার অনুগত সৈনিকেরা।এরমধ্যে ১৯৭৭ সালেই কর্নেল তাহের সহ ১১৪৩ জন সামরিক কর্মকর্তাকে বিনা বিচারে ফাঁসি দেয়া হয়। সবমিলিয়ে জিয়ার শাসানামলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুসারে।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সনের প্রথমার্ধেই ৬২,০০০ (বাষট্টি) হাজার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কারাগারে আটক রাখে, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিলাে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীবৃন্দ,জাসদকে পুরো নির্মূল করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের তিন বছর স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ১ লক্ষ ১৩ হাজার নেতা কর্মীকে পর্যাক্রমিক গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখে। নির্মম অত্যাচার অনেককে জেলখানায় হত্যা করা হয়।

জিয়ার আমলে বাকস্বাধীনতা বলতে কোন শব্দ ছিলনা।
১৯৭৫ সালে যেখানে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল ২০০ এর অধিক জিয়ার আমলে তা দু অংকে নেমে আসে,দেশে ইংরেজি পত্রিকা ছিল মাত্র দুইটি তাও সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে প্রকাশ পেতে হত। দেশের সবগুলো সংবাদপত্র জিয়ার অনুগত সামরিক বাহিনীর অফিসার কর্তৃক সেন্সর হওয়ার পর প্রকাশিত হত।জিয়ার ক্ষমতার স্বার্থে আঘাত এমন কোন কথা প্রকাশ করতে পারতোনা কোন সংবাদপত্র।সামরিক ফরমানে ঘােষণা জিয়া ঘোষণা করে কথাবার্তা, আকার ইংগিত, চিহ্ন দ্বারা সামরিক শাসক গােষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু করলে বা বললে তার শাস্তি ৫ বছর কারাদন্ড হতে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত। জাতির জনক টুঙ্গিপাড়ার কবরে, সেখানে চব্বিশ ঘন্টা সশস্ত্র পাহারা। কেউ গেলে ধমকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। না মানলে গ্রেফতার করে। মােনাজাত করতে গিয়ে গ্রেফতার হন হাজী গােলাম মােরশেদ। বঙ্গবন্ধুর কবরে এই পাহারা ১৯৮০ সন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ৩২নং বাড়ি ছিলাে তালাবদ্ধ। বাড়ির সামনে যেতে দেয়া হত না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালে ধমক খেতে হতাে,জোর করে বের করে দেওয়া হতো। কি নির্মম নিষ্ঠুর ছিল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন!

বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছিলেন,পরে বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন ক্ষতিপূরণ নেওয়ার জন্য অনেক অগ্রগতি ও করেছিলেন কিন্তু জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেন,এমনকি ৪-৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জিয়া কখনো পাকিস্তানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেনি।উল্টো জিয়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেন পাকিস্তানি আইএসআইয়ের সাথে গোপন সমঝোতা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করে বাঙালির স্বাধীনতাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় জিয়া। সেই ৭০০০ কোটি টাকার এখনো হদিস মেলেনি।
তথ্যসূত্রঃ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নথি, জেনারেল জিয়ার রাজত্ব -অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।